আমি এর আগেও অন্য এক জায়গায় বলেছিলাম যে বহুভাষার দেশ ব্রিটিশ ভারত সাম্রাজ্য ইংরেজি সূত্রে-গ্রন্থিত ছিল। স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী ভারত সেই একইসূত্রে এখনো গ্রন্থিত। মাতৃভাষা, জাতীয় ভাষা বা শিক্ষার মাধ্যম প্রসঙ্গে ভারতের গুনীব্যক্তিদের আকর্ষণীয় বক্তব্য আছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬২–১৯৪১) মাতৃভাষাকে মাতৃদুগ্ধের মতো স্বাস্থ্যদায়ক বলে একাধিকবার বক্তব্য রাখেন। তাঁর মতে, আর্থিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার পক্ষে ইংরেজি শিক্ষার যেমন প্রয়োজন তেমনি মনকে ও ব্যবহারকে মূঢ়তামুক্ত করার জন্য তার প্রভাব মূল্যবান। তিনি অবশ্য দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্কার করে বলেন, ‘দূর দেশি ভাষার থেকে আমরা বাতির আলো সংগ্রহ করতে পারি মাত্র। কিন্তু আত্মপ্রকাশের জন্য প্রভাত আলো বিকীর্ণ হয় আপন ভাষায়।’
অসহযোগ আন্দোলনের সময় জগদানন্দ রায়কে একপত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘সেদিন যখন খবরের কাগজে পড়লুম মহাত্মা গান্ধী আমাদের মেয়েদের বলেছেন, তোমরা ইংরেজি পড়া বন্ধ কর, সেইদিন বুঝেছি আমাদের দেশে দেওয়াল গাঁথা হয়েছে, অর্থাৎ নিজের ঘরকে নিজে কারাগার করে তোলাকেই আমরা মুক্তির পথ বলে মনে করচি–আমরা বিশ্বের সমস্ত আলোককে বহিষ্কৃত করে দিয়ে নিজের ঘরের অন্ধকারকেই পূজা করতে বসেছি–এ কথা ভুলচি, যে-সব দুর্দান্ত জাতি পরকে আঘাত করে’ বড় হতে চায় তারাও যেমন বিধাতার ত্যাজ্য, তেমনি যারা পরকে বর্জন করে’ স্বেচ্ছাপূর্বক ক্ষুদ্র হতে চায় তারাও তেমনি বিধাতার ত্যাজ্য।’ওই পত্রের প্রতি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৯)র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি নিরাবেগে আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘ভুয়া অহমিকা অথবা সন্দেহজনক সামাজিক ইজ্জতের দরুন আমি আমার ভগিনীদের উপর ইংরেজি শিক্ষার জন্য অপ্রয়োজনীয় জবরদস্তি চালাতে চাই না। আমি চাইব আমাদের সাহিত্যরসিক সমস্ত যুবক-যুবতী তাদের ইচ্ছামত ইংরেজি এবং বিশ্বের অন্যান্য সমৃদ্ধ ভাষা শিক্ষা করুন এবং এও আমার প্রত্যাশা যে, একজন বসুর (জগদীশচন্দ্র) মত, একজনের রায়ের (প্রফুল্লচন্দ্র) মত, অথবা স্বয়ং কবির মত তারা তাদের শিক্ষার ফসল ভারতবর্ষ ও সারা বিশ্বকে দান করবেন। কিন্তু আমি চাইব না কোন একজনও ভারতীয় তার মাতৃভাষা ভুলে যাক, বা অবজ্ঞা করুক, বা তজ্জন্য লজ্জাবোধ করুক; অথবা তাদের সর্বোত্তম ভাবনারাশি মাতৃভাষায় চিন্তা অথবা প্রকাশ করতে তারা অপরাগ, এমন ভাবনায় তারা উদ্বুদ্ধ হোক এও আমি চাইব না।’
গান্ধীর মতে, নিজের মাতৃভাষাকে ছোট করা মানে নিজের মাকে ছোট করা। তিনি বলেন, যখন তিনি ইংরেজি বলেন, তখন তাঁর মনে হয় আমি একটা পাপ করেছি। রবীন্দ্রনাথের নানা ধরনের পাপবোধ ছিল, যেমন তাঁর মতে মানুষের প্রতি অবিশ্বাস করা মহাপাপ। কিন্তু ভাষার বিষয়ে তার তেমন কোনো পাপবোধ ছিল না।
গান্ধী তাঁর প্রথম প্রধান বই ‘হিন্দ স্বরাজ’ হিন্দিতে লেখেন। অল ইন্ডিয়া কমন স্ক্রিপ্টঅ্যান্ড কমন ল্যাঙ্গুয়েজ কনফারেন্সে গান্ধী হিন্দিকে ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য জোর দেন। ভারতীয় ঐক্যের প্রশ্নে ভাষার প্রসঙ্গটি বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ১৩৩০ সালে সভাপতির ভাষণে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বাল্যকালে এমন আলোচনাও আমি শুনেছি যে, বাঙালি যে বঙ্গভাষার চর্চায় মন দিয়েছে এতে করে ভারতীয় ঐক্যের অন্তরায় সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ ভাষার শক্তি বাড়তে থাকলে তার দৃঢ় বন্ধনকে শিথিল করা কঠিন হয়। তখনকার দিনে বঙ্গসাহিত্য যদি উৎকর্ষ লাভ না করত তবে আজকে হয়তো তার প্রতি মমতা ছেড়ে দিয়ে আমরা নির্বিকার চিত্তে কোনো একটি সাধারণ ভাষা গ্রহণ করে বসতাম। কিন্তু ভাষা জিনিসের জীবনধর্ম আছে। তাকে ছাঁচে ঢেলে কলে ফেলে ফরমাশে গড়া যায় না। তার নিয়মকে স্বীকার করে নিয়ে তবেই তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ফল পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধগামী হলে সে বন্ধ্যা হয়।’
হিন্দি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমি হিন্দি জানি না, কিন্তু আমাদের আশ্রমের একটি বন্ধুর কাছ থেকে প্রথমে আমি প্রাচীন হিন্দি সাহিত্যের আশ্চর্য রত্নসমূহের কিছু কিছু পরিচয় লাভ করেছি। প্রাচীন হিন্দি কবিদের এমন-সকল গান তাঁর কাছে শুনেছি যা শুনে মনে হয় সেগুলি যেন আধুনিক যুগের। তার মানে হচ্ছে, যে-কাব্য সত্য তা চিরকালই আধুনিক। আমি বুঝলুম, যে- হিন্দিভাষার ক্ষেত্রে ভাবের এমন সোনার ফসল ফলেছে সে-ভাষা যদি কিছুদিন আকৃষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, তবু তার স্বাভাবিক উর্বরতা মরতে পারে না; সেখানে আবার চাষের সুদিন আসবে এবং পৌষ মাসে নবান্ন-উৎসব ঘটবে। এমনি করে এক সময় আমার বন্ধুর সাহায্যে এ দেশের ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে আমার শ্রদ্ধার যোগ স্থাপিত হয়েছিল। উত্তর-পশ্চিমের সঙ্গে সেই শ্রদ্ধার সম্বন্ধটি যেন আমাদের সাধনার বিষয় হয়। মা বিদ্বিষাবহৈ।’
১৯২৭ সালে হিন্দি সাহিত্য সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘হিন্দিভাষা ভাবী রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষিত হচ্ছে। রাষ্ট্রভাষা কেবল রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয়তায় সিদ্ধ হয় না, সাহিত্যের দিকে তার উপযোগিতা দেখাতে হবে। ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের দাবি কেবল সাহিত্যের দাবি পূরণ করে মেটানো যায়।’
১৯৩৬ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের লক্ষৌ অধিবেশনে উর্দুকে ভারতের মুসলমানদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য একটা প্রস্তাব করা হয়। বঙ্গ প্রদেশের প্রতিনিধিরা জোর আপত্তি তোলেন। জিন্নাহর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে অবশেষে প্রস্তাবটি পবিরবর্তিত আকারে গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘যেখানে উর্দু একটি অঞ্চলের ভাষা সেখানে উর্দুর নির্বাধ উন্নয়ন ও ব্যবহার বহাল থাকবে এবং যেখানে প্রধান ভাষা নয় সেখানে ঐচ্ছিক ভাষা হিসাবে উর্দু শিক্ষাদানের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে’
১৯৩৮ সনের ১৯-২১ ফেব্র–য়ারি ভারতের গুজরাটের হরিপুরাতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেস অধিবেশনের সভাপতির ভাষণে সুভাষচন্দ্র বসু বলেন, ‘জাতীয় সংহতির জন্য আমাদেরকে আমাদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ও একটি সাধারণ বর্ণমালার উন্নতি বিধান করতে হবে… আমি মনে করি হিন্দি ও উর্দুর মধ্যকার পার্থক্য কৃত্রিম। সবচেয়ে স্বাভাবিক লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হতে হবে ওই দুইয়ের মিশ্রণ যেভাবে দৈনন্দিন জীবনে দেশের বৃহৎ অংশে কথা বলা হয় এবং এই সাধারণ ভাষা নাগরী ও উর্দু দুই লিপিতেই লেখা যেতে পারে।’
‘কংগ্রেস সভাপতি হিন্দিকেই রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা করেছেন। এতে বাঙালীর কি দুঃখিত হবার কারণ নেই? বহুসমৃদ্ধ বাংলাভাষা রাষ্ট্র ভাষা হবার গৌরব থেকে বঞ্চিত হল কোন্ অপরাধে? ’ ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ সালে পূর্ব্বাশার সম্পাদক কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য রবীন্দ্রনাথকে এক চিঠিতে এই বলে তাঁর অভিমত জানতে চান। ওই পত্রের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে কংগ্রেস যদি বিশ্বভারতের রাষ্ট্রভাষা বলে গণ্য করে–তাহলে এ নিয়ে আমি আপত্তি করব না। কংগ্রেসের কর্তব্য কংগ্রেসের হাতে। আমি সভ্যশ্রেণীতেও নেই।–তোমরা যদি বৃথা চেষ্টা করতে চাও করো–তোমাদের বয়স অল্প, যথেষ্ট সময় আছে’ (সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে লিখিত পত্র সংখ্যা-৬/১৬ চিঠিপত্র, পৃ. ২৩০)
১৯৫২ সালের ফেব্র–য়ারি মাসে ঢাকা রাজধানী হওয়ার পাঁচ বছরও হয়নি। একুশে ফেব্র–য়ারির পর ঢাকা হলো সারাদেশের হৃদকেন্দ্র। ‘ঢাকায় কি হচ্ছে? ঢাকা কেমন হচ্ছে?’–সারাদেশের কাছে এক আলোড়িত প্রশ্ন। ঢাকার বাইরে রাজশাহী, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য শহর-উপশহর রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবিতে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠল। রাজশাহীর ভাষা আন্দোলনকারীরা দাবি করছে তাদের শহরেই প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রামে তো রচিত হলো একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম কবিতা মাহবুবুল আলম চৌধুরীর ‘কাঁদতে আসিনি, ফাসীর দাবি নিয়ে এসেছি’, এই একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়েই কবিয়াল রমেশ শীলের সেই সাড়া জাগানো গান, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলি, ভাই ঢাকা শহর রক্তে রাঙাইলি’।
বাংলা এখন বিশ্বের পঞ্চম ভাষা। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলা এখন বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। সিয়েরা লিওনে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং ভারতে অন্যতম জাতীয় ভাষা। ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরায় দ্বিতীয় ভাষা এবং আসামের করিমগঞ্জ, কাছাড় ও হাইলাকান্দি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ জেলা প্রশাসনে বাংলা ভাষা গুরুত্ব পাচ্ছে। আন্দামানের নেইল ও হ্যাভলক দ্বীপে বাংলাভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিঙ্গাপুরে বেশি-বলা ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা অন্যতম। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা! মঙ্গলগ্রহ অভিমুখে পাঠানো খেয়াযানে মানবসভ্যতার নিদর্শন হিসেবে দেওয়া সূর্যঘড়িতে বাংলা লিপিতে ‘মঙ্গল’ উৎকীর্ণ হয়।
বিশ্বের বড় বড় নগরের মধ্যে বাংলাভাষীরা দৃষ্টিকাড়া বলয় বানিয়ে বসেছে। একটি ভাষার মানচিত্রে দেখা যায়, আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস ও হিউস্টন, শিকাগো ও নিউইয়র্ক এবং ব্রিটেনের লন্ডনে বাংলাভাষীরা সংখ্যায় বেশ ভারী। পরের স্তরে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্ন, কানাডার টরন্টো ও ভ্যানকুভার, ইতালির রোম, গ্রিসের এথেন্স, আবুধাবি, সিঙ্গাপুর ও নেপালের কাঠমান্ডু। এগুলো হলো ছোট ছোট বাংলা টাউন, বাংলার সাংস্কৃতিক ঘাঁটি। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেনে বাংলা স্কুল চালু হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলসে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা অনুমোদিত। ইংল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা জিসিএসইতে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলে বাংলা নিতে পারে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সোয়াসে, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড কালচারস এবং চেক রিপাবলিকের প্রাগে বাংলা পড়ানো হয়। চেক অধ্যাপকদের বিশেষ আগ্রহ বাংলার লোকগীতি ও লোকসাহিত্যে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার অধ্যাপক ক্লিনটন বি. সিলি একজন জীবনানন্দ-বিশেষজ্ঞ।
সংস্কৃত-পণ্ডিত ভাষাবিশেষজ্ঞ স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন ছিলেন বাংলা ভাষার আদি গবেষক। লন্ডনে উইলিয়াম রাদিচে এবং কেমব্রিজের হানা রুথ টমসন বাংলা নিয়ে গবেষণা করছেন। টমসন বেঙ্গলি কনসাইজ ডিকশনারি প্রণয়ন করেছেন এবং বাংলা ক্রিয়াপদের ব্যবহার তথা ব্যাকরণ সংস্কারের প্রস্তাব তুলে সমকালীন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ লিখেছেন। ইভ্বিয়েনা বীকোভা রুশ ভাষায় লিখেছেন বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, সিয়াটল এবং রাশিয়ার মস্কোতে যে বাংলা চর্চা হয়, সেখানে ছাত্র, অধ্যাপক বা তহবিলের অনুপাতে উৎসাহ বাড়ে বা কমে।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণদান করে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক আদেশে বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে স্বাধীনতার তিন বছর পরেও অধিকাংশ অফিস-আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজি ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ তিন বছর অপেক্ষার পরও বাংলাদেশের বাঙালি কর্মচারীরা ইংরেজি ভাষায় নথিতে লিখবেন সেটা অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরনের অনিয়ম চলছে। আর এ উচ্ছৃঙ্খলা চলতে দেওয়া যেতে পারে না। এ আদেশ জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও আধাসরকারি অফিসসমূহে কেবলমাত্র বাংলার মাধ্যমে নথিপত্র ও চিঠিপত্র লেখা হবে। এ বিষয়ে কোনো অন্যথা হলে উক্ত বিধি লঙ্ঘনকারীকে আইনানুগ শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন অফিস-আদালতের কর্তাব্যক্তিগণ সতর্কতার সঙ্গে এ আদেশ কার্যকরী করবেন এবং আদেশ লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি-বিধান ব্যবস্থা করবেন।’
সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদের বিধানকে পূর্ণরূপে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিগত বিলের প্রস্তাবের ওপর ১৯৮৭ সালের ২ নং আইন পাস করা হয়। ওই আইন প্রচলনের পরও নিু আদালতে কিছু মামলায় বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে আরজি দাখিল করা হয়। দেওয়ানি কার্যবিধির ৭ নং আদেশের ১১ নং নিয়ম অনুসারে আরজি বাংলা ভাষা প্রচলন আইন অনুসারে বাংলায় না হয়ে ইংরেজিতে লেখা হওয়ায় ওইসব মামলার বিবাদী পক্ষ আরজি খারিজ করার জন্য আবেদন করে। নিু আদালত ওইসব দরখাস্ত শুনানির পর তা বাতিল করলে সংশ্লিষ্ট পক্ষরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন মামলা করে।
নিচু আদালতে ইংরেজিতে আরজি, জবাব, দরখাস্ত ইত্যাদি দাখিল করা বৈধ বলে ঘোষণা দেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইনে ‘অন্য আইনে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, এই আইনের বিধান কার্যকর হইবে’ বাক্যটি না থাকায় অনেকে মনে করেন, আদালতের কার্যক্রমে বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়নি। হাইকোর্ট রায় দেন যে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিও চলবে।
‘হাশমতউল্লাহ বনাম আজমিরি বেগমে’র মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ বাংলা ভাষা প্রচলন আইনকে সংবিধানের পরিপন্থী বা বেআইনি ঘোষণা না করলেও অধস্তন দেওয়ানি আদালতে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার আইনসম্মত বলে ঘোষণা করেছেন।
১৯৯৮ সালের ১ মার্চ ঢাকায় বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পবিত্র সংবিধানে আছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ আর প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সকল আদালতই এই প্রজাতন্ত্রের আদালত।…সম্মানিত বিচারকগণ বাঙালি, বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বাঙালি এবং বিচারপ্রার্থীগণও ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সবাই বাঙালি। সকল আদালত কর্তৃক ঘোষিত রায় বাংলা ভাষায় হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। মুষ্টিমেয় লোকের জন্য এই বিচারব্যবস্থা নয়। এই বিচারব্যবস্থা দেশের সকল মানুষের। সর্বস্তরের আদালতের সম্মানিত বিচারকগণ নিজের মাতৃভাষায় যেন নিপুণভাবে রায় লিখতে পারেন, এই বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এই ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করবে বলে জনগণ আশা করে।’
এর আগে ১৯৮৭ সালের ২২-২৪ এপ্রিল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আপিল বিচারকদের চতুর্থ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত ইংরেজিতে লিখিত এক প্রবন্ধে আমি বলি, ‘এ কথা সত্য যে প্রাচীন ও মধ্যযুগে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশে বিচারের কাজে জনগণের ভাষা ব্যবহৃত হতো না। তখনকার দিনে বিচার্য বিষয়গুলো ছিল সংখ্যায় অল্প এবং তাদের প্রকৃতিও ছিল সহজ-সাধারণ। আজ যখন রাষ্ট্রীয় কর্মে জনসাধারণ বেশি করে শরিকানা দাবি করছে এবং সরকারও চাচ্ছে শাসনকর্মে জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ, তখন জটিলতর ও হতবুদ্ধিকর বিচার্য বিষয় সিদ্ধান্তের জন্য আসছে। আমাদের মধ্যে বিদেশি ভাষার ব্যবহার মৌলিক চিন্তাধারাকে ব্যাহত করে। ফলে একটা অবাস্তব আবহাওয়া এবং বিদেশি নজিরের ওপর এক মুগ্ধ নির্ভর-প্রবণতার সৃষ্টি হয়েছে। যদি ন্যায়বিচার সদ্গুণ হয় এবং জনগণের কল্যাণের জন্যই যদি এর কাজ হয়, তবে তা জনগণের ভাষাতেই হওয়া উচিত।’
মানুষের মধ্যে যেমন ভাষাপ্রেম রয়েছে তেমনি ভাষাবৈরিতা আছে। দেশে দেশে ভাষার লড়াই নিয়ে নানা তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাষার আন্দোলনে কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে আমরা বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার দাবি করিনি। সকল মানুষের প্রতি সহমর্মিতায় ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ সালে একটি ছোট কবিতায় আমি বলেছিলাম ‘২১শে ফেব্রুয়ারি সকল ভাষার কথা কয়।’ পরের বছর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি সকল ভাষার কথা কয়’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখি। ২০১১ সালে বাংলা একাডেমী থেকে মৎসংকলিত টোয়েন্টি ফার্স্ট ফেব্রুয়ারি স্পিকস ফর অল ল্যাংগুয়েজেস প্রকাশিত হয়েছে। গ্রন্থটিতে ৭০টি ভাষায় মাতৃভাষার ওপর একশ পঞ্চাশটিরও বেশি কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি ২০০০ প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। ইউনেসকোর মহাপরিচালক ভাষার সম্মানার্থে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এক বাণীতে বলেন, ‘বিশ্বায়ন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মুখে যখন কয়েকটি ভাষা বিশ্বভাষায় রূপ নিয়েছে, এটা প্রয়োজনীয় যে আমরা স্থানীয় ভাষার বৈচিত্র্য সমুন্নত রাখি।’
এখানে আমাদের বড় দায়, ভাষার দৈন্যমোচন এবং বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সমৃদ্ধ ভাষাগুলোর সমকক্ষ করে তোলা। আমরা সেই দায়মোচনে পরিশ্রমবিমুখ না হয়ে নিজেদের একাগ্রচিত্তে নিবেদন করলে সে হবে আমাদের জন্য মঙ্গলময় ও কল্যাণকর।
দেশের আইন ও সংবিধান সম্পর্কে সম্যক পরিচয় ও উপলব্ধি মাতৃভাষার মাধ্যমে অর্জিত না হলে দেশের প্রশাসনে নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে না এবং আইনের শাসনের আলোকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে না–এ বিশ্বাস ও উপলব্ধিতে ২০০৩ সালে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আমি আইন-শব্দকোষ প্রণয়নে এক উদ্যোগ নিই। ভারতীয় আইন কমিশন ইংরেজ প্রবর্তিত আইনকে দেশের আইন বলে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানের হামুদুর রহমান আইন কমিশন ওই মত সমর্থন করে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ১৯৪৭ সালের ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস হওয়ার পর উপমহাদেশে গৃহীত সাংবিধানিক পরিবর্তনের মধ্যেও ১৯৪৭-পূর্ব প্রচলিত আইনের ধারাবাহিকতা প্রায় অক্ষুন্ন আছে। বিদেশি বা আন্তর্জাতিক আইনে আমাদের আপত্তি নেই যদি তা আমাদের দেশের আইনের সঙ্গে স্বান্ধীকৃত হয়। যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তার মাতৃভাষায় আমাদের আদালতে আশ্রয় বা প্রতিকার লাভ করতে পারে। তবে তার আবেদন যদি অ-বাংলা ভাষায় হয় তবে তাকে তার আরজি, জবাব ও দরখাস্ত বাংলা ভাষায় সত্যায়িত করতে হবে যাতে দেশের বিচারক দেশি ভাষা শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েও দেশি ভাষায় তার বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারেন। সাধু ভাষারীতিতে লিখিত সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন শব্দকোষে আমরা সাধুভাষা অবলম্বন করি। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক নির্দেশে চলতি ভাষা ব্যবহারের কথা বললেও পরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারি কাজকর্মে সাধু ভাষারীতি অনুসরণ করার জন্য তাগিদ দেন। আমাদের বাংলা বানান ও ভাষারীতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এখন একান্ত বিধেয়।
আমি অন্যত্র বলেছি, ‘যে-ভাষায় বিচারকর্ম সমাধা হয় না, সে-ভাষা বল সঞ্চার করে না, দুর্বল হয়ে থাকে। বাক্যগঠন ও বাক্যবিন্যাসে সে-ভাষায় ঋজুতা, দৃঢ়তা, নির্দিষ্টতা ও নিশ্চয়তার অভাব দেখা দেয়। আইন ও বিচারকার্যে ব্যবহারের ফলে একটি ভাষার উন্নতি ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ইংল্যান্ডে বিচারকর্মে নরম্যান-ফ্রেঞ্চ ভাষা বাদ দিয়ে ইংরেজির প্রচলন ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। শেক্সপিয়ারের যুগে নাট্যশাস্ত্র ও ব্যবহারশাস্ত্র যুগপৎ ঋদ্ধি লাভ করে। নিজেদের ভাষার কল্পিত দৈন্যের অজুহাতে অন্য ভাষার দ্বারস্থ হওয়া কোনো কাজের কথা নয়। আমাদের ভাষার দৈন্যমোচনের প্রথম পদক্ষেপটাই হবে আদালতে সেই ভাষার প্রচলন, সে-ব্যবহার তেমন দক্ষহস্তে না হলেও।’
পরাধীন জাতি স্বাধীন হলেও পরাধীনতার খোয়ারি কাটতে দেরি হয়। আমরা সংবিধানে বাংলা পাঠের সঙ্গে ইংরেজি পাঠের বিধান রাখি। সামরিক শাসনামলে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোতে ইংরেজি পাঠ-কে আমরা প্রাধান্য দিই।
একুশে ফেব্র“য়ারি ষাট বছরেও আমরা শুনি যে, বাংলা ভাষার জাতীয়করণের জন্যই আমরা শিক্ষায় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য পিছিয়ে যাচ্ছি। এমন কথাও শোনা যায়, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে অনন্যোপায় হয়ে শিল্পের জাতীয়করণ করে আমাদের অব্যবস্থা ও দুর্গতি হয়েছিল, অনুরূপ দুর্গতি ঘটবে যদি আমরা রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলনের কথা উঠলে বলা হয়, আমরা নতুন ইস্যু নিয়ে অযথা ঘোঁট পাকাচ্ছি। মনে হয়, আমাদের একমাত্র প্রাসঙ্গিক ইস্যু নিজের স্বার্থসিদ্ধি চরিতার্থ করার জন্য কিভাবে ক্ষমতায় যাওয়া। অন্যসব প্রসঙ্গের প্রতি আমাদের আর কোনো উৎসাহ, আনুগত্য ও মমত্ত্ব নেই।
‘উচ্চ আদালতের রাষ্ট্রভাষা’ প্রবন্ধে আমি বলি, ‘আমরা কি যাব না তাদের কাছে, যারা শুধু বাংলায় কথা বলে?’ –এই আর্ত প্রশ্নের আমরা কোন উত্তর পাইনি।
দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের অনেকের মাঝে বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা দেখে আমি মাতৃভাষার সপক্ষে রবীন্দ্রনাথ-এর পূর্বভাষে বলেছিলাম, ‘একটা চিন্তা মাঝে মাঝে মনে আসে, উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে এই ফরমানের বিরুদ্ধে যদি এলান করা হতো “ইংরেজিই রাষ্ট্রভাষা থাকবে”, তবে কি আমাদের সমাজে কোনো ব্যত্যয় দেখা দিত?’
ধর্মপ্রচারের উদ্দেশে খ্রিস্টান মিশনারি দেশে দেশে ভাষার প্রচলন, উৎকর্ষ সাধন, লিপি উদ্ভাবন, ব্যাকরণ-অভিধান প্রণয়ন ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। আজ আমরা গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারের প্রবক্তা হয়ে সেদিকে যথাযথ মন দিচ্ছি না। একুশে ফেব্র–য়ারির গত ষাট বছরের চল্লিশ বছর কেটেছে স্বাধীন বাংলাদেশের আমলে। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন প্রাদেশিক কাঠামোয় বাংলা ভাষার উন্নতিকল্পে কাজ করার জন্য কোন বাধা না থাকলেও এবং স্বাধীনতার পরে প্রতি বছর সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের অঙ্গীকার করেও আমাদের প্রয়াস অকিঞ্চিৎকরই রয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত কোন ভাষানীতি প্রণয়ন করিনি। আমরা কী লক্ষ্যে কাকে প্রণোদনা দেব আমরা তা জানি না। এবং ক্ষমতার অর্জন ও বিসর্জনে আমরা যে আবেগ ও উৎসাহ দেখিয়েছি সেই পরিমাণে মাতৃভাষার উন্নয়নে আমরা কৌতূহলও দেখায় নি। প্রায় সম অনীহা ও অকৌতূহল দেখা যায় বিচার বিভাগকে নির্বাহী থেকে পৃথকীকরণ এবং স্থানীয় স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যপারে সাংবিধানিক নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে। জ্ঞানের রাজ্যে বিশেষ করে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার ব্যবহার বড়ই অপ্রতুল। একুশের ষাট বছরে আমাদের ভাষা দৈন্যমোচনে আমাদের যে কর্তব্য শুধু যে তা পালন করতে হবে তাই নয় একুশ ফেব্র–য়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর আমাদের ওপর আর একটা বাড়তি দায়িত্ব পড়েছে সকল ভাষার উন্নতিকল্পে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে ঘরে বদান্যতা প্রদর্শন করে আমাদের দেশে যে অ-বাংলা ভাষা রয়েছে তা সংরক্ষণ ও প্রসারণের জন্য বিশেষভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ থেকে ষোল বছর আগে যতদিন না আমরা স্বাক্ষরতার আশীর্বাদ প্রতিটি নাগরিকের ঘরে পৌঁছে দিতে পারছি, যতদিন বকলম ও ঢেরা সহির রেওয়াজ উঠে না যাচ্ছে, যতদিন নির্বাচনের প্রতীক হিসেবে হুক্কা, ধানের শীষ বা নৌকার প্রচলন বন্ধ না হচ্ছে এবং নিচের কাঠামো থেকে সমাজের উপর কাঠামো সকল কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে সর্বোচ্চ আদালতে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে, ততদিন বাংলা ভাষার সংগ্রাম আমি অসমাপ্ত বলে গণ্য করবো।
উনিশ শ’ ছিয়ানব্বই ইংরেজি সালের এই অগৌরবের ফেব্রুয়ারিতে এসব কথা কে বা কারা শুনবে বা পড়বে? সেই সংশয় এখনো যায়নি। বাংলা ভাষার সংগ্রাম চলবেই চলবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন